বার্তা
শ্রীমতী সুমিত্রা চট্টোপাধ্যায়
সমগ্র দেশের বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের প্রত্যেকের জীবনধারায় এক আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে। লক্ ডাউন থাকা কালীন অসহনীয় অবস্থা ছিল প্রায় সমস্ত লোকেদের। এখন তাও যারা কোনরকম কাজে নিযুক্ত তারা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। কিন্তু বাচ্চারা, ছাত্রছাত্রীরা বিশেষ করে যারা স্কুল কলেজে পড়ে তাদের এবং যাদের বিভিন্ন বিষয়ে সপ্তাহে তিন চার দিন টিউশন নিতে যেতে হয় বা বাড়িতে গৃহ শিক্ষক-শিক্ষিকার আসার ব্যাপার থাকে, তাদের এখনো প্রতিদিনের জীবন দুর্বিষহ কাটছে। অবশ্য পড়াশুনা, গান তথাকথিত অন্ লাইনের মাধ্যমে চলছে। জানি না, তারা শিখছে কতটা। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়, শিক্ষা সব সময় গুরুমুখী। সামনাসামনি বসে যতটা ভালো করে শিখতে পারে, অন্ লাইনে ছাত্রছাত্রীরা যে কোনো শিক্ষারই রসাস্বাদন কি সেভাবে করতে পারে?
আমি গানের মানুষ।আমার অবস্থা খুবই করুণ। আজ প্রায় ন'মাস হতে চললো গান শেখানোর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। অনেক ছাত্র ছাত্রী ফোন করে, কেউ ভিডিও কল্ করে। এমনও হয়েছে যে, কেউ কেউ বাড়ির দরজায় কলিং বেল দিয়ে নীচে থেকে একবার শুধু দেখে গেছে।
গান শেখানো ও ছাত্রছাত্রীরা ছিল আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন। কিন্তু কিছু করার নেই। অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। তবে এর মধ্যে একটা সান্ত্বনা, ফেসবুক- WhatsApp এ চেনা, অচেনা অনেক ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন গান, বিশেষ করে রবীন্দ্র নাথের গান শুনতে পাচ্ছি। আজকে আলোচনা কিছুটা এই বিষয় নিয়ে।
সঠিক সুরে সুকণ্ঠে গাওয়া অনেকের গানই মনকে সত্যিই শান্তি দিচ্ছে। আজকাল প্রায় সমস্ত জায়গায় মিডিয়া বা গানের অনুষ্ঠানের কর্মকর্তাদের এতই টাকার চাহিদা থাকে যে নিঃসন্দেহে যাদের গান ভালো লাগছে তাদের মধ্যে হয়তো অনেকেই এই টাকার চাহিদা মেটাতে পারে না। আর পারে না বলেই এখনকার এই অবস্থায় অন্ লাইনে এরা সুন্দর সুন্দর গান পরিবেশন করছে এবং সেই সঙ্গে আমাদেরও ভাবাচ্ছে যে সমাজের কি করুণ অবস্থা! আসল গুণের কদর নেই শুধু টাকার খেলা চলছে। এবার ব'লি, যারা ভালো গায় তাদের কথা বাদ দিয়ে সেই সব ছেলেমেয়েদের কথা যারা প্রায় গানের 'ক-খ-গ-ঘ' না জেনেও, সুর-তাল সম্বন্ধে কোন সম্যক ধারণা না নিয়েও তারা যখন অন্ লাইনে গান শোনায়। হ্যাঁ বুঝি, কম বয়সের ছেলেমেয়ে তাদের গান শোনানোর ইচ্ছে হতেই পারে। আমার শুধু এইটুকুই বলার তাদের উদ্দেশ্যে যে আগে গানটা ভালোভাবে শেখো উপযুক্ত গুরুর কাছে। সঠিক সুর ক্ষেপণ, তাল-লয়, সব ভালো করে তালিম নাও, নিয়মিত বাড়িতে অভ্যাস করতে বসো। তারপর বাইরে নিজেকে প্রকাশ করো। আরো কষ্ট হয়, এদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে তারা যখন টাকা দিয়ে গান করে। দেখি, তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নির্ভয়ে গান পরিবেশন করতে বসে যায়। এইসব ছেলেমেয়েদের বুঝতে দেওয়া হয় না যে তাদের শিক্ষা এখনো পরিপূর্ণ হয় নি।
তাই বলি, যেখানেই নতুন প্রজন্ম গান করবে সে যে ভাবেই হোক (টাকা দিয়ে বা না দিয়ে) তোমরা প্রথমেই ভাববে, তোমরা কি সঠিক ভাবে মানসিক দিক দিয়ে সুস্থ সুন্দর গান পরিবেশন করতে পারবে? মানুষের মনই সব। মন যদি সায় দেয়, তাহলে মনের কথা শুনবে। নচেৎ না।
সামনে শারদীয়া পুজো। কিছু মৃন্ময়ী প্রতিমা বিভিন্ন প্যান্ডেলে নিশ্চয় আসবেন। কিন্তু চিন্ময়ী প্রতিমা মা, আমার স্থির বিশ্বাস, সেই সব প্রিয়জন-হারা, স্বজন- হারা লক্ষ লক্ষ পরিবারে পদধূলি দেবেন এবং কিছু শোকাতুর পিতামাতা, সন্তানদের পাশে দাঁড়াবেন এবং দু'হাত ভ'রে স্নেহের পরশ দেবেন। তোমরাও এবার পুজোয় সকলে এদের পাশে দাঁড়াও এবং স্নেহের ও ভালোবাসার দু'হাত বাড়িয়ে দাও, এটাই আমার কামনা।
বন্ধুরা সবাই খুব খুব ভালো থেকো। নিজের বাড়িতে শান্তি দাও আর সর্বহারাদের ঘরে মঙ্গলদীপ জ্বালিয়ে দাও। জগজ্জননী মা তো সর্ব প্রথম এদের ঘরেই স্নেহের স্পর্শ দেবেন।
"যেথায় থাকে সবার অধম
দীনের হতে দীন
সেইখানে যে চরণ তোমার রাজে
সবার পিছে, সবার নীচে,
সবহারাদের মাঝে"।
এই আলেখ্যটি শোনার জন্য নীচের Link টি click করুন -
শ্রীমতী সুমিত্রা চট্টোপাধ্যায়
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা




Comments
Post a Comment