রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন বিষয়ে কিছু কথা
শ্রীস্বপন কুমার ঘোষ
‘মুক্তছন্দ-গােষ্ঠী’, বাঙলা সাহিত্য, সঙ্গীত তথা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিষয়ে চর্চা যাঁরা করেন তাঁদের কাজ সর্বজনসমক্ষে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে ব্রতী হয়ে বহু মানুষের ধন্যবাদার্হ হয়েছেন। তাঁরা ‘শারদ সঙ্গীত সংখ্যা ২০২০' নামে একটি পত্রিকা প্রকাশের আয়ােজন করেছেন এবং বহু গুণী মানুষের সঙ্গে আমার মতাে নগণ্য রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষার্থীকেও অনুপ্রাণিত করছেন সঙ্গীত পরিবেশনের বিষয়ে কিছু প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখার জন্য, এজন্য আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।
আমি যেহেতু রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষার্থী তাই সেই সঙ্গীত পরিবেশনের ক্ষেত্রে আমার ‘সঙ্গীতপিতা” শ্রদ্ধেয় অশােকতরু বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশিত অনুশীলন সম্বন্ধে জ্ঞাতব্য কিছু পদ্ধতি বর্তমান শিক্ষার্থীদের অবহিত করতে সচেষ্ট হয়েছি, যদি তাঁদের কাজে লাগে ভেবে, হয়তাে অনেকেই জানেন সেক্ষেত্র কিছু পুনরাবৃত্তি মনে হতে পারে - আমি তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী ।
যে কোন সঙ্গীত শিক্ষার কতকগুলি স্তর আছে ।
১) প্রত্যেকের নিজের ‘ষড়জ’ চেনা খুব জরুরী - অর্থাৎ ‘সা’ সুরটি জানা।
আমরা কেউই নিজের গলার আওয়াজ চিনি না । ষড়জ’ চেনার অর্থ হল ‘স্কেল’ চেনা - এটি শিক্ষকের সাহায্যে জানতে হয়।
২) ‘ষড়জ’ চেনা হলে পরবর্তী স্বরগুলির সঙ্গে পরিচিত হতে হবে এবং পদ্ধতিগতভাবে প্রতিটি স্বরাভ্যাস করতে হবে । স্বরস্থান স্থির করার ক্ষেত্রে সব চেয়ে উপযুক্ত বাদ্যযন্ত্র হল তানপুরা’ এটির ব্যবহারও শিক্ষকের সাহায্যে জানতে হবে। তবে একেবারে প্রাথমিক স্তরে অনেক ক্ষেত্রে হারমােনিয়ামের সাহায্য অস্বীকার করার উপায় নেই।
৩) বাঙলার সাংস্কৃতিক পরিধি বহু বিস্তৃত এবং প্রতিটি বিষয়েরই আলাদা আলাদা ক্ষেত্র এবং চরিত্র আছে যেটি আদ্যন্ত অধিগ্রহণ করা দরকার । প্রত্যেকের নিজের পছন্দমত যে কোন একটি বিষয় নিয়ে চর্চা করা প্রয়ােজন যাতে পদ্ধতিগতভাবে শিক্ষার মাধ্যমে সেই বিষয়টিকে আত্মস্থ করা যায় তবেই পারদর্শিতা লাভ করা সম্ভব। তা না হলে কোন বিষয়েই ব্যুৎপত্তি নিয়ে পরিবেশনের দক্ষতা আসতে পারে না।
৪) বাঙলা সঙ্গীত বাণী নির্ভর। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি গানের বাণীর অর্থ এবং উচ্চারণ সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হওয়া একান্ত প্রয়ােজন। বহু গীতিকার তথা সঙ্গীতকার বাঙলায় জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তাঁদের রচনাশৈলী তথা পরিবেশন পদ্ধতি আলাদা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। উপযুক্ত শিক্ষকের সাহায্যে শিক্ষা গ্রহণ প্রয়ােজন।
৫) আমি যেহেতু রবীন্দ্রসঙ্গীত বিষয়ে চর্চা করি তাই বলতে পারি এই গানের রচনাশৈলীর মধ্যে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত-প্রাদেশিক-বৈদেশিক লােকসঙ্গীত-কীর্তন-বাউল ইত্যাদি বিভিন্নধারার সঙ্গীতের মিশ্রণ ঘটেছে । রবীন্দ্রনাথ যেহেতু মূলত কবি ছিলেন তিনি বিভিন্ন সঙ্গীতের নির্যাসটুকু নিয়ে তার সঙ্গে নিজের কাব্যরসের মিশ্রণ ঘটিয়ে এমন এক ভাব-প্রধান সঙ্গীত আমাদের উপহার দিয়ে গিয়েছেন যে গীতরীতির সঙ্গে অন্য যে কোন গীতরীতির সবিশেষ পার্থক্য বিদ্যমান। এই গানের স্বরবিন্যাস ও তার প্রয়ােগে স্বরক্ষেপনের মাধ্যমে অর্থ পরিস্ফুট করার শিক্ষা উপযুক্ত শিক্ষকের সাহায্যে আয়ত্ত করা বিশেষ প্রয়ােজন।
‘মুক্তছন্দ’ গােষ্ঠীর সাংস্কৃতিক চেতনা ও অক্লান্ত পরিশ্রম বাঙলার বিভিন্নধারার সংস্কৃতি-প্রেমীদের চর্চা ও বিকাশের ক্ষেত্রে একটি মূল্যবান ‘মঞ্চ' প্রস্তুত করে দিয়েছেন এর জন্য তাঁদের সাধুবাদ জানাই এবং প্রত্যেকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এটিকে যথার্থভাবে ব্যবহার করে বাঙলার সংস্কৃতির পতাকাকে উর্ধ্বে তুলে ধরুন এই প্রার্থনা করি।
এই আলেখ্যটি শোনার জন্য নীচের Link টি click করুন -




খুব ভালো রচনা । অনেক কিছু জানতে পারলাম
ReplyDelete